- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
"ভালোবাসা কারে কয়"
' ভালোবাসা কি ? আমি এখনো বুঝি না, ' বললো আমার স্ত্রী। তাও আবার বললো বিয়ের প্রায় পনেরো বছর পর, এক বিকেলে, আমাদের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে। অন্য সবাই মিলে ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলো যে ভালোবাসা কি, তা না বোঝবার কি আছে, তাও বিয়ের এত দিন পরে ! এ ত খুব সহজ ব্যাপার । ওরা এও বললো যে, সবাই তো জানে এবং পরিষ্কার ভাবে দেখতে পায় যে, আমাদের পরিবারে ভালবাসাই হচ্ছে জীবনে চলার মূল মন্ত্র। আমাদের বিয়ে হয়েছিল, আজকের ভাবাদর্শে খুবই অদ্ভুত ভাবে। বিয়ের আগে আমরা কেও একে অপরকে দেখিনি। মোবাইল ফোন তখন ছিল না , তাই কথাও বলা হয়নি। আমি ত আবার চিঠি ও লিখতে পারি না। মা - বাবারা আমাদের ছবি দেখালেন, আর তাই দেখেই আমরা বুঝতে পারলাম যে, আরে ! এই ত সেই, যার জন্য সারা জীবন আমরা অপেক্ষা করে আছি । বিয়ের পর বুঝলাম যে আমরা একে অন্যের জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছি। তাই, ঐ 'ভালোবাসা কি ? ' কথাটা আমার কানে খটাং করে লাগল। ও এই কথাটা কেন বললো? তা হলে কি আমার ভালোবাসায় কোন খামতি আছে ? পরে ভাবলাম, সত্যিই ত, ভালোবাসা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। ভালোবাসা তাহলে কি? ভালোবাসা কি শুধু শেষের কবিতার মত গুটি কয়েক লাবন্যপ্রভারা আর শ্রীকান্তের কমললতারাই বোঝেন?
এর পর আরো চব্বিশ বছর কেটে গেছে । এক দিন সকালে কাজ করতে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েছি । এমন সময়ে মোবাইল ফোনে খবর এল যে আমার স্ত্রী হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে আর আমাদের এক ডাক্তার আত্মীয় ওকে তার গাড়ীতে করে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে গেছে। খবরটা এল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। ওর কি করে হৃদরোগ হবে ? আমি বাড়ী থেকে বের হবার আগে ও ত ভালই ছিল । ওর শরীরে ত কোন রোগই নেই । ও ত মোটাও না । লোকে বলে যে, মানুষ নাকি পাপ করলে এমন ভাবে শাস্তি পেতে হয় । ও ত কোন দিন কোন পাপও করেনি । মনে পড়ে গেল অনেকদিন আগের এক অন্ধকার গুহার মধ্যে শিবলিঙ্গের কথা - ওখানকার পূজারী আমার স্ত্রীকে বললেন ' এই শিবের মাথায় হাত দিয়ে ক্ষমা চান আপনার করা পাপের জন্য , তা হলে সব পাপ কেটে যাবে ।' আমার স্ত্রী তৎখনাৎ তার হাতটা শিবলিঙ্গ থেকে সরিয়ে নিয়ে বলছিল - ' কেন ? আমি ত কোন পাপ করিনি !' পূজারী চমকে উঠেছিলেন। পরে , উনি আমাদের আর ঐ কথা বলতে বলেন নি । আমি ভালকরেই জানতাম যে আমাদের ভালোবাসার সংসার এই ভাবে কিছুতেই ধংস হতে পারে না । হাসপাতালে ছুটে গিয়ে স্ত্রীর খাটের পাশে দাঁড়ালাম । ওর মুখে গাঢ় ক্লান্তির ছাপ । এত ক্লান্ত ত ওকে আগে কখনও দেখিনি । আমি কি তা হলে ওর শরীরের খেয়াল ঠিকমতো রাখিনি? জানতাম যে, ওকে ঘুম পাড়ানো হয়েছে ইনজেকশান দিয়ে । তবু , না ডাকতেই, ও নিজের থেকেই চোখ মেলে আমার দিকে তাকাল। আর , তার চোখের ভাষায় পড়লাম, ও বলছে যে , ওর এই হঠাৎ অসুস্থতার জন্য ও খুব লজ্জিত, খুবই লজ্জিত আমাদেরকে এই বিপদের মধ্যে ফেলার জন্য । পরক্ষনেই সে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল ।
রাত্রে বাড়ী ফিরে দেখলাম , আমার স্ত্রীর সাজানো বাড়ী পড়ে রয়েছে রেবেকার বাড়ীর মতো - চারিদিকে ওর উপস্থিতি টের পাচ্ছি , অথচ ওই হাসপাতালে । শুধু খাটের ওপর এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে কয়েকটা ব্যথার ওষুধ, কটা এনটাসিডের বড়ি । বুঝলাম , কতই না কষ্ট পেয়েছে সে হাসপাতালে যাওয়ার আগে । তার মধ্যেও ও মুখ ফুটে আমাকে কিছু জানায়নি যাতে আমার কাজের ক্ষতি না হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে গেল সবটা - গত বছরের আমার ভয়ংকর ব্যাধি , ওর বিধবা মায়ের বয়সজনিত মানসিক রোগ , আমাদের সংসারের হাজারো সমস্যা - সবকিছু একাই সামলেছে সে, অন্য কাউকে বুঝতে দেয়নি । ওর নীরব মানসিক যন্ত্রনা আর অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রম - সব কিছুই আমাদের জন্য । কাউকে সাপে কামড়ালে যেমন বিষটা অনেক সময় মুখ দিয়ে চুষে বার করে দিতে হয় বলে শুনেছি, ও তাই করেছে । কিন্তু , গরলটা বড্ড বেশী ওর মধ্যে চলে গেছে - আমাদের দোষে , আমাদের অজান্তে । বিথোভেন - এর ফিফথ্ সিমফনিতে যেমন প্রবল ভাবে দরজায় করাঘাতের পর বেরিয়ে আসে সেই অনবদ্য ভালোবাসার আকুতি , তেমনি , অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে এবং অনেক দুঃখের মধ্যে দিয়ে বোঝা গেল , আর, চোখের সামনে দেখা গেল , আমার স্ত্রীর অসীম ভালোবাসা ।
Comments
চোখে জল এসে গেল।
এরকম করে কতোজন ভাবতে পারে!!
Sotyii mon chhnue galo
Khub pranjol bhashae likhechen. Khub bhalo laglo pore.
চমৎকার
জানিনা
ভালোবাসা কারে কয়
সেকি কেবলি যাতনা ময়।
বেশ সাবলীল
আবার কবে পড়তে পাব?